|

আসামী ধরতে গিয়ে ডাকাত সন্দেহে গনধোলাইয়ের স্বীকার পুলিশ

প্রকাশিতঃ ২:৫৩ অপরাহ্ন | অক্টোবর ০১, ২০১৮

আসামী ধরতে গিয়ে ডাকাত সন্দেহে গনধোলাইয়ের স্বীকার পুলিশ

মহসিন রেজা, শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

শরীয়তপুর-৩ আসনের দুই নেতার গ্রুপিংয়ে জের ধরে ডামুড্যা থানার একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ধরতে যাওয়ার নামে আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হানা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তখন স্থানীয় লোকজন ডাকাত পরেছে সন্দেহে শোর চিৎকার দেয়। এ সময় জনতার হাতে ডাকাত সন্দেহে গনধোলাইয়ের স্বীকার হন ডামুড্যা থানা পুলিশের এসআই মো. আতাউর রহমান। তিনঘন্টা পর ডামুড্যা থানার ওসির সহযোগিতায় ওই এসআইকে উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলার ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের এরিকাঠি গ্রামের ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মুহাম্মদ দুলাল মাদবরের বাড়িতে। ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে ওই এলাকায় পুরুষ শূন্য হয়ে পরেছে।

এ ঘটনায় রোববার সকালে ডামুড্যা থানা পুলিশের এসআই মো. আতাউর রহমান বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে বাদল (৩৫) ও গোপাল (৩২) নামে দুইজনকে আটক করে পুলিশ।

দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবরের বড় ভাই ইব্রাহিম মাদবর, স্থানীয়ভাবে ও ডামুড্যা থানা সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবরের সাথে স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী রাসেল সরদার, সিহাব উদ্দিন গংদের সাথে এলাকায় রাজনৈতিক শত্রুতা রয়েছে।

এর আগে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষ নিয়ে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। হঠাৎ গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ রাসেল সরদার, ওয়াসীম সরদার, রাকিব সরদার, সিহাব উদ্দিন ছৈয়াল, নুর ইসলাম শিকদার, জামাল বেপারীসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জন রামদা,ছেনদা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবরের বাড়িতে যায়।

এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে ডামুড্যা থানার এসআই মো. আতাউর রহমান, এএসআই রাকেশ মন্ডল, সুদীপ্ত শাহীন, কনেস্টেবল মিঠুন রায়, অমিত হাসান, হোসেন আলী ও ইমন হাজারী সিভিল পোশাকে ঘটনাস্থলে ছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ির লোকজন ডাকাত পরেছে সন্দেহে শোর চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে গ্রামের লোকজন কয়েকটি মসজিদের মাইকে ডাকাত ঢুকেছে এই সন্দেহে ঘোষনা দেয়। ঘোষনা শুনে এলাকার শত শত লোকজন সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে জড়ো হতে থাকে তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা ও সিভিলধারী পুলিশ পালিয়ে যাওয়ার সময় ডামুড্যা থানার এসআই মো. আতাউর রহমানকে আটক করেন এবং লোকজনের হাতে গনধোলাইর স্বীকার হন।

পরে দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর এসআই আতাউর রহমানকে হেফাজতে রাখেন এবং ডামুড্যা থানার ওসিকে ফোন দেন। ওসি ঘটনাস্থলে আসলে তার হাতে এসআইকে তুলে দেন। এ ঘটনায় রোববার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই এলাকা তল্লাশী করে দুইজনকে আটক করেন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের এড়িকাঠি গ্রামের রাজন মাদবর, নুর মোহাম্মদ ও আখিঁ আলম বলেন, রবিবার দুপুরে পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। আসবাবপত্র ভাংচুর করে।

সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর বলেন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারীর সমর্থক। গত ২৮ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার লোক নিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করলাম কেন? তাই স্থানীয় এমপি নাহিম রাজ্জাকের সমর্থক লোকজন রাসেল সরদার, সিহাব উদ্দিনগংরা সিভিলধারী পুলিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে শনিবার রাতে হানা দেয়। তাই এলাকার লোকজন ডাকাত ভেবে এক এসআইকে আটক করে। পরে আমি এসআইকে নিরাপদে আমার বাড়িতে রাখি ওসিকে ফোন দেই। ওসি এসে তাকে নিয়ে যায়।

এদিকে, ওয়াসীম সরদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদররা।

ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর এজাহার নামীয় পলাতক দুইটা মামলার আসামী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করার জন্য ইসলামপুর এড়িকাঠি গ্রামে যান এসআই মো. আতাউর রহমান, এএসআই সুদীপ্ত শাহীনসহ সাত আটজন পুলিশ।

দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর ও সাইফুলের বাড়ির উঠানে গেলে বাড়ির মহিলারা উত্তেজিত হয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে। তখন এলাকাবাসী অতর্কিত ইট পাটকেল মারে ও লাঠি দিয়ে আঘাত করলে এসআই মো. আতাউর রহমান আঘাতপ্রাপ্ত হন। আতাউরকে ডামুড্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে এসআই মো. আতাউর রহমান বাদী হয়ে দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর ও সাইফুল ইসলামসহ ১৭ জনের নামে এবং ওই এলাকার ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

দেখা হয়েছে: 658
সর্বাধিক পঠিত
ফেইসবুকে আমরা

অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। সকল লেখার স্বত্ব ও দায় লেখকের।

প্রকাশকঃ মোঃ উবায়দুল্লাহ
সম্পাদকঃ আরিফ আহম্মেদ
সহকারী সম্পাদকঃ সৈয়দ তরিকুল্লাহ আশরাফী
নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ সবুজ মিয়া
মোবাইলঃ ০১৯৭১-৭৬৪৪৯৭
বার্তা বিভাগ মোবাইলঃ ০১৭১৫-৭২৭২৮৮
ই-মেইলঃ [email protected]
অফিসঃ ১২/২ পশ্চিম রাজারবাগ, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা ১২১৪