|

শরীয়তপুর জেলা আ.লীগের নব-গঠিত কমিটিতে হাইব্রিডের ভিড়

প্রকাশিতঃ ১০:১২ অপরাহ্ন | মার্চ ২৪, ২০১৮

বাংলাদেশ-আওয়ামী-লীগ-নৌকা

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উল্লেখ করা ‘কাউয়াদের ভিড়’ এখন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদ্যগঠিত কমিটিতে। দীর্ঘদিনের ত্যাগি ও পরীক্ষিত নেতাদের বদলে কমিটিতে সুবিধাবাদি, বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতারাই দখল করে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে।

শরীয়তপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর জেলা কমিটিতে জায়গা করে নেওয়া বিতর্কিত সদস্যদের একটি তালিকা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে। ওই তালিকাতে তারা উল্লেখ করেছেন, বিতর্কিত-হাইব্রিড সদস্যদের কর্মকাণ্ড।

জেলা কমিটির নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি এম এ সাত্তার খান একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কঠিন অবস্থানে থেকে বিরোধী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে সাংসদ নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় দল থেকে বহিস্কার হন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকেই চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং ব্যবসা শুরু করেন।

কমিটির আরেক নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি সামসুল হক খানও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিরোধী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পরে অতিবিপ্লবী সর্বহারা পার্টির সাথে জরিত থকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৭৪ সালে জাজিরা লাউখোলা হাটে দুই আওয়ামীলীগ কর্মীকে দিন দুপুরে গুলি করে সর্বহারা পার্টির স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেই হত্যাকারিদের সাথে তিনিও থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।

১৯৭৫ সালের পরে বিএনপির রাজনীতির সমর্থক ছিলেন জনাব খান। যখন যে দল ক্ষমতায় যায় তখন তাদের সাথে তাল মিলাতে সারা জীবন অভ্যস্ত তিনি। এক সময়ে সুমী প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারি ছিলেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনিও একটি প্রেসের মালিক হন। রমনার সাবেক কমিশনার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম ও মির্জা খোকনের সাথে তার এক সময়ে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল। জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পদ থেকে সরাসরি তাকে বর্তমান কমিটিতে অনেক বড় পদন্নোতি প্রদান করে সহ-সভাপতি করা হয়েছে।

অন্যতম সভাপতি সহ-সভাপতি ফজলুল হক ঢালী ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোসাইরহাট উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার অপরাধে ২০১৪ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারিতাকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমান কমিটিতে তাকেও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী উপায়ে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি ইদ্রিস ফরাজী ইতালী প্রবাসী। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার সেনেরচরে। তিনি কোন দিন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেননা। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমাতে উল্লাহ আওরঙ্গের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ২০০২ সালের পর থেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন (খাম্বা মামুন)এর সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামীলীগের কিছু প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে ২০১১ সালে ইতালী আওয়ামীলীগের কনিষ্টতম (৭১ নং) সদস্য হন। এরপর ২০১৬ সালে একই সূত্রে ইতালী আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের পূর্বে বাংলাদেশে তিনি বা তার পরিবারের কেউ আওয়ামী রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। অভিযোগ রয়েছে বিপুল পরিমানের অর্থের বিনিময়ে তাকে বর্তমান জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে ।

অপর সহ-সভাপতি আবুল কালাম সামসুদ্দিন দীর্ঘ দিন ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালের পর থেকে টানা ১৪ বছর ডামুড্যা উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে স্থান দেয়া হয়েছে।

নবনির্বাচিত দপ্তর সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান ফেরদৌস খান। শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক কালু সরদার এর একনিষ্ঠ শিষ্য হিসাবে পরিচিত, তিনি গত ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালু’র নির্বাচন করেন। তিনি জেলা ছাত্রশিবির সাবেক সাধারন সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন।

নবনির্বাচিত প্রচার ও প্রকাশন সম্পাদক আব্দুল হামিদ সাকিদার তিনি ছাত্রজীবন থেকে জাসদ এর রাজনীতি করতেন এবং আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মীদের উপর জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচার করে, এর পূর্বে তার আওয়ামীলীগ এর কোন কমিটিতে নাম ছিল না, তিনি এক লাফে জেলা আওয়ামীলীগ এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন, সবার মুখে শোনা যায় তিনি নাকি অনেক টাকার মালিক। এ যেনো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো।

নবনির্বাচিত বন ও পরিবেশ সম্পাদক নাসির মাহমুদ তিনি শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হকের শ্যালক এবং তার সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত পি.এস। এর আগে কোন দিনও ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে তিনি জরিত ছিলেন না।

কমিটির যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক সঞ্জীব কুমার নাগ তিনি একজন ব্যাবসায়ী ও পৌরসভার কাউন্সিলর। তিনি ইতিপূর্বে কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। তাকে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আমিনুল ইসলাম রতন তিনি ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিরোধী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের পক্ষে নৌকার পরাজয়ে বর্ননাতীত ভূমিকা রাখেন। তিনি তার নিজ এলাকার তিনটি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী। তিনি ২০০১ সালের পর আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মীদের উপর জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচার করে। তিনি আওয়ামীলীগ নিজ হাতে অনেক আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মী দের গুলি করে হত্যা করে, তার নামে ১৩ টি মামলা চলমান।

নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক পিন্টু তিনি ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ধানকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডামুড্যা উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার অপরাধে ২০১৪ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারী তাকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।

কমিটির নবনির্বাচিত সদস্য জাকির হোসেন দুলাল বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য । গোসাইরহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকাবস্থায় দুইবার পার্টি থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। প্রথমবার জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের একটি জনসভা মঞ্চে হামলা করে ভাংচুর করার অপরাধে তাকে বহিস্কার করা হয়। পরবর্তিতে সাধারণ ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে আনা হলে পূনরায়২০১৪ সালে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাকে পূনরায় বহিস্কার করা হয়। জাকির হোসেন দুলাল একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। বর্তমান কমিটিতে তাকে কার্যকরী সদস্য করা হয়েছে।

নবনির্বাচিত সদস্য মজিবুর রহমান খোকন একজন ইউপি মেম্বার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। ২০০৩ সালে ভেদেরগঞ্জের নারায়নপুরে এক ব্যবসায়িকে গুলি করে হত্যা করে তার কয়েক লক্ষ টাকা লুট করে নেয়ার মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছিল। এক সময় সর্বহারা পার্টির হয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অস্ত্র লুটের মামলার আসামী হিসেবে পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছেন। ২০০১ সালে দলের বিপক্ষে হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের হয়ে নির্বাচন করেন এবং বুড়ির হাট বাজারে নৌকা গেইট ভেঙ্গে দেয় ও তিনি২০০১ সালের পর আওয়ামীলীগ এর নেতা কর্মীদের উপর জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচার করে।এই কমিটিতে তাকে কার্যকরী সদস্য করা হয়েছে।

নবনির্বাচিত সদস্য আবুল মুনসুর আজাদ শামীম ডামুড্যা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকাকালিন ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। তাকে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে কার্যকরি সদস্য করা হয়েছে।

নবনির্বাচিত সদস্য এ্যাড. কামাল হামিদী তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়ন বিএনপির নেতা, তার বড় ভাই প্রয়াত মান্নান হামিদী চিকন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও জেলা কমিটির সাবেক অাইন বিষয়ক সম্পাদক, তিনি শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক, সাবেক যুবদলের সহ- সভাপতি তার পরিবার সকলেই বিএনপির রাজনীতি করেন, তার শশুড় শরীয়তপুর পৌরসভা বিএনপির সভাপতি, তার ভাতিজি অ্যাডভোকেট মাহবুবা অাক্তার শিল্পি, শরীয়তপুর জেলা জাতীয়তাবাদী অাইনজীবী ফোরামের যুগ্ম অাহবায়ক।

শরীয়তপুর -১ আসনের এমপির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ার সুবাদে আওয়ামীলীগ এর সাধারন সদস্য না হয়েও তিনি জেলা আওয়ামীলীগ এর সদস্য বানানো হয়।

১৬: নবনির্বাচিত সদস্য সুলতান মুন্সী পালং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এর সভাপতি নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে তাকে এক লাফে জেলা আওয়ামীলীগ এর সদস্য করা হয়।

এছাড়াএই টাকা ওয়ালা ভেজাল নেতাদের দৌরাত্নে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের নব-গঠিত কমিটিতে যারা পরীক্ষিত আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত বড় পদ পাওয়ার যোগ্য তারাও পায়নি তাদের প্রত্যাশীত পদ।

সূত্রঃ পূর্ব পশ্চিম বিডি নিউজ
দেখা হয়েছে: 525
সর্বাধিক পঠিত
ফেইসবুকে আমরা

অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। সকল লেখার স্বত্ব ও দায় লেখকের।

প্রকাশকঃ মোঃ উবায়দুল্লাহ
সম্পাদকঃ আরিফ আহম্মেদ
সহকারী সম্পাদকঃ সৈয়দ তরিকুল্লাহ আশরাফী
নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ সবুজ মিয়া
মোবাইলঃ ০১৯৭১-৭৬৪৪৯৭
বার্তা বিভাগ মোবাইলঃ ০১৭১৫-৭২৭২৮৮
ই-মেইলঃ [email protected]
অফিসঃ ১২/২ পশ্চিম রাজারবাগ, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা ১২১৪