|

চলন্ত গাড়ি ধরা পড়লে একশ টাকা জরিমানা

প্রকাশিতঃ ৮:০৬ অপরাহ্ন | ফেব্রুয়ারী ১১, ২০১৮

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ

‘সাবধান, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ, পায়ে হেঁটে পারাপার হউন। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় ধরা পড়িলে একশত টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য থাকিবেন। আদেশক্রমে খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে মো. আশরাফুল ইসলাম।’

কথাগুলো কাউনিয়া-বোনারপাড়া রেল রুটের গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া গ্রামের ঘাঘট নদীর ওপর ভেড়ামারা রেলসেতুর পশ্চিম পাশে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি একটি কাঠের সাঁকোর দুইপাশে লেখা রয়েছে।

খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে স্থানীয় আব্দুল লতিফ, ফরিদ উদ্দিন, সাইদার রহমান ও এরশাদ হোসেন নামের চার যুবকের উদ্যোগে ও তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান কাজী ইব্রাহীম খলিল উলফাত এবং গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাঠের সাঁকোটি তৈরি করা হয়।

এরপর সাঁকোটি দিয়ে পার্শ্ববর্তী বল্লমঝাড় ও কুপতলাসহ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মানুষের বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি চলাচল শুরু করে। এরপর থেকে দীর্ঘদিনেও আর কোনো মেরামত কাজ না করায় সাঁকোটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সাঁকোটি দিয়ে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-সুলতানপুর রেলওয়ে ব্রাঞ্চ নামে একটি কোম্পানি ১৮৯৯-১৯০০ সালে সান্তাহার জংশন থেকে ফুলছড়ি পর্যন্ত মিটার গেজ সেকশনটি চালু করে। এই কোম্পানিও ১৯০৪ সালের ১ এপ্রিল ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে আসে। ১৯০৫ সালে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাউনিয়া-বোনারপাড়া মিটারগেজ সেকশনটি চালু হয়।

এরপর থেকে কিশামত বালুয়া গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অল্প সময়ে জেলা শহরে আসার জন্য ভেড়ামারা রেলসেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। এতে করে রেলসেতু থেকে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে নদীতে পড়ে গিয়ে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চলাচলে মানুষকে সাবধান করে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকোটির দুইপাশেই লাগানো হয়েছে সাইনবোর্ড। মানুষ বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল থেকে নেমে সাঁকোটি হেঁটে পার হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা যাতে সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে না পারে সেজন্য দক্ষিণ পাশে সাঁকোতে উঠতেই মাঝখানে একটি খুঁটি পুঁতে রাখা হয়েছে। নদীতে পুঁতে রাখা কাঠের সাঁকোটির খুঁটির গোড়া আলগা হয়ে যাওয়ায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচলের সময় সাঁকোটি দোলে। এ সময় ধীরে ধীরে মানুষকে হেঁটে চলাচল হতে হয়।

কিশামত বালুয়া গ্রামের রিকশাচালক সেলিম মিয়া বলেন, আগে রেলসেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হতো। এই কাঠের সাঁকোটি হওয়ার পর সহস্রাধিক মানুষের সেই দুর্ভোগ লাঘব হয়। কিন্তু বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে কাঠের সাঁকোটির উপর দিয়ে রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এটি তৈরির পর আমাদের অনেক উপকার হয়েছিল। এখন আবার অনেক এলাকা ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এজন্য খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। তাড়াতাড়ি সাঁকোটি মেরামত করা দরকার।

খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামাদ আজাদ বলেন, কাঠের সাঁকোর ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। যা এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হয়েছে।

সাঁকোটি মেরামতের ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আনিছুর রহমান বলেন, এই কাঠের সাঁকো আমরা তৈরি করিনি। তাই সাঁকোটি মেরামতের সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

আপাতত কাঠের সাঁকোটি মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দু-একদিনের মধ্যেই ওই কাঠের সাঁকোটি দেখতে যাব। এরপর আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

দেখা হয়েছে: 442
সর্বাধিক পঠিত
ফেইসবুকে আমরা

অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। সকল লেখার স্বত্ব ও দায় লেখকের।

প্রকাশকঃ মোঃ উবায়দুল্লাহ
সম্পাদকঃ আরিফ আহম্মেদ
সহকারী সম্পাদকঃ সৈয়দ তরিকুল্লাহ আশরাফী
নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ সবুজ মিয়া
মোবাইলঃ ০১৯৭১-৭৬৪৪৯৭
বার্তা বিভাগ মোবাইলঃ ০১৭১৫-৭২৭২৮৮
ই-মেইলঃ [email protected]
অফিসঃ ১২/২ পশ্চিম রাজারবাগ, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা ১২১৪