|

রাজশাহী অঞ্চলে ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির প্রতারণার জাল

প্রকাশিতঃ ৮:০২ অপরাহ্ন | মার্চ ০২, ২০১৮

আলিফ, তানোর ‘রাজশাহী’ প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী অঞ্চলে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের নামে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ বেকার যুবকদের পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণার ফাদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জানা গেছে, মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টাকায় জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধীনে মাত্র ২১ দিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ডাক্তারি সনদ। গ্রামের সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের প্রলোভন দিয়ে এই সনদ বাণিজ্য করে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও গুঞ্জন বইছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, তানোর উপজেলা সদর ও বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রীতিমত পোস্টারিং ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাম্য ডাক্তারের সনদ দেয়া হবে বলে প্রচার চলছে। ভর্তি ও প্রশিক্ষণের স্থান মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভর্তির শেষ তারিখ ২৮ ফেব্ররুয়ারী এবং প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু হবে ১লা মার্চ থেকে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, এক মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদে বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে বলা হয়েছে। আর প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো হচ্ছে এনাটমি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজী, গাইনি ও চক্ষুরোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, দন্ত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, মেডিশিন ও প্যাথলজী ক্লাশসহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্যাট্রিক্যাল ক্লাস নেয়া হবে।

আরএমপি ‘গ্রাম ডাক্তার’ কোর্সের মেয়াদ ৬ মাস, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ। শর্ট ডিপ্লোমা-ইন-মেডিসিন কোর্সের মেয়াদ এক বছর, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ এ ছাড়াও এক মাসের বিশেষ কোর্স রয়েছে।

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে চক্রটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি জানাজানি হবার পরে কিছুদিন আড়ালে থেকে আবারো তারা রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছেন চলতি বছরের ২৮৮ফেব্ররুয়ারী বুধবার ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং ১লা মার্চ থেকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ক্লাশ শুরু করার কথা রয়েছে।

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, যদি মাত্র ২২ দিনের প্রশিক্ষণে মানবদেহের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, তাহলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রী নেয়ার কি দরকার ?। তিনি বলেন, চিকিৎসকের প্রলোভন দিয়ে বেকারদের প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল।

খোজ নিয়ে গেছে, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং রুলার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ ‘আরএমপি’ এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের হলরুমে রবিবার ও সাপ্তাহিক সরকারি ছুুটি বাদে ওই এক মাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে মাত্র ২২ দিন এর বিনিময়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে নেয়া হবে ৬ হাজার পাচশ’ টাকা করে।

স্থানীয় আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিদিন এক ঘন্টা করে মাত্র ২২ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা চিকিৎসা দেবে। এটা শুধুমাত্র প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল মাত্র। এর আগেও এই চক্রটি তানোর উপজেলায় কয়েকবার প্রশিক্ষণের কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের প্রলোভন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার সেজে বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজারে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না বুঝে না জেনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

পরিচয় গোপণ রেখে এই প্রতিবেদক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমন্বয়কারি ডাক্তার নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি সম্পন্ন ও ১লা মার্চ থেকে প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু হয়েছে। আমরা তাদের কাছে থেকে ৬ হাজার পাচশ’ টাকা করে নিচ্ছি। বিনিময়ে হাতে-কলমে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা যাতে মানুষের চিকিৎসা করতে পারে তার জন্য পৃথক দুটি সনদপত্র দেয়া হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) বলেন, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন তাদের এই প্রশিক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে এড়িয়ে যান।

এব্যাপারে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছি পরে কথা বলেন, বলেই ফোন রেখেদেন। তবে রুলার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ ‘আরএমপি’ ও ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির সমন্বয়কারী ডা, নাজমুল হোসাইন বলেন, এটা সরকারের একটা সহায়ক কর্মসূচি।

মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজক জেলা সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমরা মুলত তাদের সহায়ক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাম ডাক্তারের সনদ দিবো এটাকে চিকিৎসকের সনদ বলা ঠিক নয়।

এব্যাপারে সভাপতি গ্রাম ডাক্তার আলহাজ্ব ইব্রাহিম হোসেন এক মাস প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সিভিল সার্জন স্যার সম্পৃক্ত রয়েছেন, আর ৬ মাস ও এক বছরের প্রশিক্ষণ ‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি দেখভাল করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ও উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে প্রতিষ্ঠান ভূয়া বা তাদের কর্যক্রম প্রতারণা বলা অনৈতিক।

দেখা হয়েছে: 2311
সর্বাধিক পঠিত
ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। সকল লেখার স্বত্ব ও দায় লেখকের।

প্রকাশকঃ মোঃ উবায়দুল্লাহ
সম্পাদকঃ আরিফ আহম্মেদ
সহকারী সম্পাদকঃ সৈয়দ তরিকুল্লাহ আশরাফী
নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ সবুজ মিয়া
মোবাইলঃ ০১৯৭১-৭৬৪৪৯৭
বার্তা বিভাগ মোবাইলঃ ০১৭১৫-৭২৭২৮৮
ই-মেইলঃ [email protected]
অফিসঃ ১২/২ পশ্চিম রাজারবাগ, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা ১২১৪